-ওহে পথিক ওমন ধড়মড়িয়ে চললে কোথায়? এখনতো তোমাদের ব্যস্ততা ফুরিয়েছে! বৈশাখের উত্তাপও দারুণ!এসো ছায়ায় কিছুক্ষণ জিরিয়ে নাও দেখি।এর ফাঁকে তোমার সাথে দু-চারটি আলাপও করা যাবে!
-তা যাবে, কিন্তু মনটা আমার বেজায় খারাপ হে বৃক্ষ। গোটা পৃথিবী আজ অসুস্থ, মনুষ্যজাতি বড্ড হুমকির মুখে।
-তা তো আমি জানি!করোনার কারণে আজ তোমারা আতঙ্কিত।তবে জানকি!এই মহামারী করোনার জন্যই আজ আমরা মহা খুশি।
-কি আশ্চর্য! মানুষের অকাতরে প্রাণ যাচ্ছে,আর তুমি বলছো খুশিতে আছো?
-আলবৎ। তাহলে কথাগুলো শুনো কান খাড়া করে..
প্রকৃতির বিরাট অংশজুড়ে আমাদের বসবাস। আলো পানি নিয়ে আমরা বেঁচে থাকি। আমাদের শরীর জুড়ে বাতাস খেলা করে,পাখিরা বাসা বাঁধে, পশু পাখির অন্নের যোগান দেই আমরা।বিভিন্ন ঋতুতে একেক রকম সাজে রাঙিয়ে তুলি প্রকৃতি-পরিবেশ। ফুলে ফলে এ ধরিত্রীকে মাতিয়ে রাখাই আমাদের কাজ। শুধু তাই নয়, এইযে ধরিত্রীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ, তোমাদের বেঁচে থাকার পেছনে আমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা তোমাদের বিষাক্ত গ্যাস গ্রহণ করে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখি। ফল দিয়ে তোমাদের খাদ্য চাহিদা মেটায়।বড় বড় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ,প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে তোমাদের রক্ষা করি। গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ন্ত্রণ করি।
আমাদের এহেন কোন জিনিস নাই যা তোমাদের বেঁচে থাকায় সাহায্য করে না। অথচ আজ তোমাদের কারণেই আমরা হুমকির মুখে!
তোমরা নাকি বিশ্বায়নের যুগে প্রবেশ করেছ। চারদিকে গড়ে উঠছে আকাশচুম্বী দালানকোঠা, ভুরি ভুরি শিল্প কারখানা, পারমাণবিক চুল্লি, অস্ত্র কারখানা আরো কত কি। আর এগুলো তৈরি করতে ব্যবহার করছ আমাদের অভায়ারণ্য, যেখানে আমরা বাঁচি।
তোমাদের বাঁচায়। নির্বিচারে হত্যা করছো আমাদের। মানলাম তোমাদের প্রয়োজন, কিন্তু পাহাড়েও আমাদের হত্যা করছো, বন জঙ্গলেও হত্যা করছো। পাহাড় কেটে বানাচ্ছো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষাগার। বড় বড় দালান কোঠায় আমরা আকাশ দেখতে পাইনা, সূর্য দেখতে পাই না! আমাদের প্রতিবেশীরা মারা যাচ্ছে, আমরা নিঃসঙ্গ হয়ে যাচ্ছি। শিল্প-কারখানার কার্বন আমাদের প্রজনন ব্যাহত করছে। তোমাদের বোকামির কারণে পৃথিবীর ফুসফুস’ আমাজন পুড়ে ভস্মীভূত।
বিভিন্ন জায়গায় দাবানল, পুড়ছি আমরা সাথে জীবজন্তু। শুনোনি! অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের সাথে জীবজন্তুর কান্না !
তোমরা নাকি খুব বুদ্ধিমান। বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় মঙ্গলে-চাঁদে পা রাখছো, আবিষ্কারের মহরথ চলছে তোমাদের। তোমরা নাকি উন্নত সভ্যতা গড়েছো!
কিন্তু যারা তোমাদের বেঁচে থাকার রসদ যোগায় তাদেরকেই হত্যা করার মত বোকামি করো কেন?
তোমরা নাকি সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী,অথচ ক্ষমতার লোভে নিজেদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছো। ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেন সহ প্রভৃতি আগুনের লেলিহান শিখা নিভছেইনা।
তোমরা মানুষ হয়ে মানুষকে হত্যা করতে পারো কিভাবে? কই আমরা তো আমাদের স্বজাতিকে হত্যা করি না!
নিজেদের জাতিকে মারার জন্য তৈরি করছো পারমানবিক বোমা, আণবিক বোমা, জীবাণু অস্ত্র সহ আরো কত ভয়াবহ সব। একবার জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমা ফেললে , কত মানুষ মরলো আর আমরা তো পুড়ে ছাই! সেখানে এখনও আমরা জন্মাতে পারি না।
তোমরা বোমার পরীক্ষা করো পাহাড়গুলোতে , আমরা বাঁচতে পারি না। তোমাদের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে আমরা আনন্দ করতে পারিনা। যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার ছোট ছোট শিশু বিকলাঙ্গ হয়ে মৃত্যুর দোরগোড়ায়। খেতে পায়না, লোকেরা বেঁচে থেকেও মৃত্যুর স্বাদ নিচ্ছে। এত উন্নত প্রাণী হয়েও বোকামির শেষ টুকুও বাকি রাখছো না!
গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ছে, ঘূর্ণিঝড়ে তোমাদের পুঁজিবাদী শহর লন্ডভন্ড করছে অকাল বন্যায় ডুবে যাচ্ছে, বাতাসে লাশের গন্ধ সাথে বিষাক্ত গ্যাস, খাদ্য ঘাটতিতে ভুগছো। এরপরেও কি তোমরা হুঁশে ফিরবে না?
আজ করোনার তোপে তোমাদের উন্নত বিজ্ঞান-বুদ্ধি থমকে আছে ,সব বন্ধ। আর আমরা কোনরূপ শঙ্কা ছাড়াই বেঁচে আছি।
আমাদের প্রতিবেশী জীবজন্তুরা নির্ভয়ে বেড়াচ্ছে ,অনেক অঞ্চলে হারাতে বসা প্রাণীরা দেখা দিয়েছে। আমাদেরও বৃদ্ধি ঘটছে। প্রকৃতি হাফছেড়ে আজ নতুন ঢঙ্গে সেজেছে। বৃষ্টি এসে ধুইয়ে দিচ্ছে আমাদের সমস্ত ক্লেশ, শঙ্কা। বাতাস এসে খুশির লেহান ছড়িয়ে দিচ্ছে।
আজ তোমরা ছাড়া, আমরা সবাই মুক্ত। স্বাধীনভাবে বেঁচে আছি।আজ প্রাণভরে গান গাই ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান’।
লেখক: হাদিউল ইসলাম
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
Leave a Reply